কটকা সমুদ্র সৈকত | Kotka Beach 17/01/2022


PC:


সুন্দরবনের দক্ষিন পূর্বকোনে অবস্থিত কটকা সমুদ্র সৈকত (otka Beach) যা সুন্দরবনের আকর্ষনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য কটকাতে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার। কটকা ওয়াচ টাওয়ার থেকে সোজা উত্তরে কটকা সমুদ্র সৈকত। স্থানীয়দের কাছে কটকা সমুদ্র সৈকতটি জামতলা সমুদ্র সৈকত হিসাবে পরিচিত।

 

বেশ নির্জন ও পরিচ্ছন্ন সৈকতের বেলাভূমিজুড়ে চোখে পড়ে কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। কটকা সৈকতটি সোজা পূর্বদিকে কচিখালিতে গিয়ে মিশেছে। এই সৈকতে ঢেউয়ের আকার অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এবং অজ্ঞাত চোরাবালি জন্য পানিতে নামা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে প্রায়ই দেখা মেলে সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। এ ছাড়া মনোরম চিত্রা হরিণের দল, বিভিন্ন জাতের পাখি, শান্ত প্রকৃতি এবং বিভিন্ন বন্য প্রাণীর উপস্থিতির কারণে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় কটকা অভয়ারণ্য সব সময়ই আলাদা স্থান দখল করে আছে।

 

বন বিভাগ কার্যালয়ের পেছনে কাঠের তৈরি টেইলের উত্তর দিকে কেওড়ার বনের একটু নিরিবিলি জায়গায় গেলে অনিন্দ্য সুন্দর চিত্রা হরিণের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে বানর, বন্য শুকর, বনবিড়াল এবং নানা প্রজাতির পাখির সাথে শীতকালে কুমির দেখতে পাওয়া যায়। বনের দক্ষিণে তিনটি টাইগার টিলায় প্রায়শই বাঘের পায়ের ছাপ দেখাতে পাওয়া যায়। পূর্বে রয়েছে ঘন বন আর মিঠা জলের পুকুর। এই পুকুরই এখানকার কর্মরত কোস্টগার্ড, ফরেস্ট অফিসার এবং স্থানীয় জেলেদের পানি একমাত্র উৎস। কটকা বন বিভাগ কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমুখী কাঠের তৈরি টেইলের উত্তর পাশের খালটির ভাটার সময় ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের ঘন শ্বাসমূল দেখা যায়। বনের দক্ষিণে কিছুক্ষণ হাঁটলে চোখে পড়বে পরপর তিনটি টাইগার টিলা। এ টিলায় প্রায়ই বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়।

 

কটকার জামতলা ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখা যায় বন্য প্রাণীর অপুর্ব দৃশ্য, হরিণ পালদের বিচরণ, শুকরের ছোটাছুটি ,বানরের কারসাজি, বাঘের হরিণ শিকার কিংবা রাজকীয় ভঙ্গিতে বাঘের চলার দৃশ্য ইত্যাদি পর্যটকদের ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করে। কটকা ওয়াচ টাওয়ারকে পিছু ফেলে সোজা উত্তরে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে গেলে জামতলা সমুদ্র সৈকত। পথে চলতে চলতে বিভিন্ন আকারের জামগাছ সৈকতটির নামের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। জামতলা সৈকতটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন। বেলাভূমিজুড়ে শুধুই দেখা যায় কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। কোথাও কোথাও দেখা যায়, জোয়ারের ঢেউয়ে ধুয়ে যাওয়া গাছের শেকড়। সৈকতটি সোজা পুবে গিয়ে শেষ হয়েছে কচিখালিতে। জামতলা সমুদ্র সৈকতটি স্নানের (গোছল) জন্য আদর্শ জায়গা নয়।

 

কিভাবে যাবেন?

বর্তমানে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছে। ভাল ট্যুর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সাথে সুন্দরবনে যেতে পারবেন সহজেই। এই সব প্রতিষ্টানের লোকদের মাধ্যমে কটকায় যেতে পারবেন।

 

লঞ্চ হচ্ছে কটকাতে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম। পর্যটকদের নিয়ে লঞ্চ কটকা খালে নোঙ্গর করা হয়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাগেরহাটগামী বিভিন্ন বাস চলাচল করে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায় মেঘনা পরিবহন ও পর্যটক পরিবহন এর বাস। আর গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে সাকুরা পরিবহন এবং সোহাগ পরিবহন এর বাস ছাড়ে। চাইলে কমলাপুর থেকে ট্রেনের মাধ্যমে খুলনা আসতে পারেন। খুলনা থেকে রুপসা কিংবা বাগেরহাটের মংলা বন্দর থেকে সুন্দরবন যাওয়ার লঞ্চ পাবেন। এছাড়াও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকেও সুন্দরবনে যাওয়ার বিভিন্ন নৌযান ভাড়া করতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্টের কচিখালী, হিরণপয়েন্টের নীলকমল এবং কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। নীলকমলে থাকতে চাইলে দেশি পর্যটকদের প্রতি কক্ষের জন্য তিন হাজার টাকা লাগবে আর বিদেশিদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষের জন্য লাগিবে তিন হাজার টাকা আর বিদেশিদের জন্য লাগবে পাঁচ হাজার টাকা। কটকাতে প্রতি কক্ষ নিতে দুই হাজার টাকা লাগবে এবং বিদেশিদের জন্য রুম প্রতি পাঁচ হাজার টাকা লাগবে।

 

বাগেরহাটে থাকার জন্য তেমন আবাসিক হোটেল ব্যবস্থা নেই। রেল রোডে মমতাজ হোটেলে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান তুলনামূলক ভাল, তবে খরচ একটু বেশি। এছাড়া মমতাজ হোটেলের আশেপাশে অন্য হোটেলগুলোতেঅ থাকার জন্য খোঁজ নিতে পারেন।

 

মংলায় থাকার জন্যে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল আছে। পশুর বন্দরে পর্যটকদের থাকার জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে।

 

সাতক্ষীরা শহরে থাকতে চাইলে এখানে কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাবেন। শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।

 

খুলনা নগরীতে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?