
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021

ধুপপানি ঝর্ণা | Dhuppani…
16/04/2021
.jpg)
ঝরঝরি ট্রেইল | Jorjori…
02/05/2021
.jpg)
রিসাং ঝর্ণা | Risang…
20/03/2021
16/04/2021
16/04/2021
02/05/2021
20/03/2021
PC: Azim Khan
পানাম নগর (Panam City) বা পানাম সিটি হল নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর, এটি তেরো শতকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত। ১৫ শতকে ঈশা খাঁ সোনারগাঁয়ে বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। সোনারগাঁয়ের প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠে এই নগরী। ব্রিটিশ আমলে সুতার কাপড়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল এই পানাম নগর। ২০০৬ সালে ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ডের তৈরি বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০ টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় পানাম নগর স্থান পায়। বর্তমানে এই এলাকা বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দ্বারা সুরক্ষিত।
বাংলার স্বাধীন রাজা ঈসা খাঁর পদচারণা ছিলো এই নগরীতে। ১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনাগাঁওয়ে। পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীপথে বিলেত থেকে আসতো বিলাতি থানকাপড়, দেশ থেকে যেতো মসলিন। প্রায় ঐসময়ই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইউরোপীয় অনুপ্রেরণায় নতুন ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠে পানাম নগরী। পরবর্তীতে এই পোশাক বাণিজ্যের স্থান দখল করে নেয় নীল বাণিজ্য। ইংরেজরা এখানে বসিয়েছিলেন নীলের বাণিজ্যকেন্দ্র।
১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের নামফলক থেকে ধারনা করা হয় বেশিরভাগ বাড়িই ঊনবিংশ শতাব্দিতে তৈরী। মূলত পানাম ছিলো হিন্দু ধনী ব্যবসায়ীদের বসতক্ষেত্র। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ছিলো ঢাকা-কলকাতাজুড়ে। তারাই গড়ে তোলেন এই নগর। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে মোঘলদের সোনারগাঁ অধিকারের পর সড়ক ও সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানী শহরের সাথে পানাম এলাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। বর্তমানে মুগল আমলের কিছু কাজ এখনও দৃশ্যমান। সেতুর অবস্থান ও তিনদিকের খাল-বেষ্টনী থেকে বোঝা যায় পানাম, সোনারগাঁর একটা উপশহর ছিলো । সুলতানী আমল থেকে এখানে বিকশিত ছিলো বাংলার সংস্কৃতি।
পানামের টিকে থাকা বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি উল্লেখযোগ্য। সড়কের উত্তর পাশে ৩১টি আর দক্ষিণ পাশে ২১টি বাড়ি রয়েছে। বাড়িগুলোর অধিকাংশই আয়তাকার, উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত, উচ্চতা একতলা থেকে তিনতলা। বাড়িগুলোর স্থাপত্যে ঔপনিবেশিকতা ছাড়াও মোঘল, গ্রিক এবং গান্ধারা স্থাপত্যশৈলীর সাথে স্থানীয় কারিগরদের শিল্পকুশলতার অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়। ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই-লোহার তৈরি ব্র্যাকেট, ভেন্টিলেটর আর জানালার গ্রিল। মেঝেতে রয়েছে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই খিলান ও ছাদের মধ্যবর্তী স্থানে নীল ও সাদা ছাপ দেখা যায়। নগরীর অভ্যন্তরে আবাসিক ভবন ছাড়াও মসজিদ, গির্জা, মন্দির, মঠ, নাচঘর, চিত্রশালা, পান্থশালা, খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, পুরনো জাদুঘর, গোসলখানা ও গুপ্ত পথ রয়েছে। এছাড়া ৪০০ বছরের পুরনো টাকশাল বাড়ি ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তৈরি নীলকুঠি এখানে দেখতে পাওয়া যায়।
লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর: পানাম নগরী থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দুরত্বে রয়েছে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের প্রবেশ পথে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি ভাস্কর্য রয়েছে। জাদুঘরে মোট ১১ টি গ্যালারিতে দুর্লভ ঐতিহ্যের নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে। গ্যালারিগুলোতে নিপুণ কাঠ খোদাই করা জিনিস, মুখোশ, নৌকার মডেল, লোকজ বাদ্যযন্ত ও পোড়া মাটির নিদর্শন, জামদানি ও নকশিকাঁথা ইত্যাদি স্থান পেয়েছে।
গোয়ালদি মসজিদ: লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর থেকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা রিকশা ভাড়ায় গোয়ালদি মসজিদ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ১৫১৯ সালে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর রাজত্বকালে মোল্লা হিজাবর আকবর খান কতৃক নির্মিত গোয়ালদি মসজিদটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান।
পানাম সিটিতে প্রবেশ করতে ১৫ টাকার টিকেট কাটতে হয়। জাদুঘরে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ৩০ টাকায় টিকিট কাটতে হয়। প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার গুলিস্তান থেকে দোয়েল, স্বদেশ কিংবা বোরাকের এসি বাসে করে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা নামতে হবে। গুলিস্তান থেকে উপরোক্ত বাস গুলোর ভাড়ার পরিমান যথাক্রমে ৪৫, ৪০ এবং ৫০ টাকা। মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে ব্যাটারী চালিত অটোতে কিংবা রিকশায় করে ২০ থেকে ৪০ টাকা ভাড়ায় পানাম নগরীতে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন?
ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে সন্ধ্যার মধ্যে পূনরায় ঢাকায় ফিরে আসা সম্ভব। তবে রাত্রিযাপনের প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জ শহরের হোটেল মেহরান, হোটেল সোনালি, হোটেল নারায়ণগঞ্জ, হোটেল সুগন্ধা, হোটেল সুরমা ও হোটেল রুপায়ন ইত্যাদিকে বেছে নিতে পারেন।
কোথায় খাবেন?
নারায়নগঞ্জ শহরে রেলগেট এলাকায় বেশ কিছু খাবারের হোটেল আছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে মনির রেস্তোরা, নিরিবিলি রেস্টুরেন্ট, শাহী রেস্টুরেন্ট, নিউ ঘরোয়া, খাবার ঘর ও বিভিন্ন বিরিয়ানি হাউজের মতো স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট রয়েছে।