সোনারগাও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর | Sonargaon Folk Art and Crafts Foundation 15/01/2022


PC:


দক্ষিণ এশিয়ার সবকটি দেশগুলোর মধ্যে আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ বেশ ছোট হলেও এর সংস্কৃতির বিস্তৃতি বেশ বড়। প্রাচীন গৌরবময় ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক বিশাল লীলাভূমি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলই বেশ সমৃদ্ধ, তবে এদের মধ্যে সোনারগাঁও বাংলার ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল প্রাচীন জনপদ। আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকশিল্পকে ধরে রাখা ও সর্বজন স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্য ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরীর একটি পুরোনো বাড়িতে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (Bangladesh Folk Art and Crafts Foundation) প্রতিষ্ঠা করেন।

 

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ১৫০ বিঘা আয়তনের কমপ্লেক্সে খোলা আকাশের নিচে বাংলার প্রকৃতি ও পরিবেশে গ্রামীণ রূপকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের শৈল্পিক কর্মকান্ডের পরিচয় তুলে ধরতে শিল্পী জয়নুল আবেদীন এই জাদুঘর উন্মুক্ত পরিবেশে গড়ে তোলার প্রয়াস নেন এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সটি প্রায় ১০০ বছর পুর্রাতন সর্দার বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। এই ফাউন্ডেশনে আছে গোপীনাথ সাহা সরদার বাড়ি, জয়নুল আবেদীনের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ভাস্কর্য, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের আবক্ষ ভাস্কর্য, জয়নুল আবেদীনের ভাস্কর্য, জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর, লোকজ মঞ্চ, সেমিনার রুম, কারুশিল্প গ্রাম এবং সবুজে মোড়া সুবিশাল উদ্যান।

 

প্রায় ৪৫০০-এর অধিক প্রাচীন নির্দশন স্থান পেয়েছে জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘরে। আছে বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার প্রাচীন শিল্পীদের সুনিপুণ হাতের তৈরী বিভিন্ন শৈল্পিক ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য নানা পণ্য সামগ্রী। সর্দার বাড়িতে মোট ১০টি গ্যালারী রয়েছে। গ্যালারিগুলোতে কাঠ খোদাই, কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোকজীবনের পরিবেশ, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, তামা-কাসা-পিতলের নিদর্শন, লোহার তৈরি নিদর্শন, লোকজ অলংকারসহ রয়েছে বহু কিছু। 

 

ভবনটির সামান্য পূর্বে রয়েছে লোকজ স্থাপত্যকলায় সমৃদ্ধ আধুনিক এক ইমারতে প্রতিষ্ঠিত জয়নুল আবেদীন স্মৃতি জাদুঘর। এই ভবনটিতে মাত্র দু’টি গ্যালারি। এই দুইটি গ্যালারির মধ্যে একটি গ্যালারি কাঠের তৈরি, যা প্রাচীন ও আধুনিক কালের নিদর্শনসমৃদ্ধ। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রাকৃতিক, বৈশিষ্ট্য কাঠ এবং কাঠ থেকে বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরি এবং সর্বশেষ বিক্রির সামগ্রিক প্রক্রিয়া, অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে সুন্দর মডেল দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই দুটি ভবনের বাইরে রয়েছে পাঠাগার, ডকুমেন্টেশন সেন্টার, সেমিনার হল, ক্যান্টিন, কারুমঞ্চ, গ্রামীণ উদ্যান ও বিভিন্ন রকমের বৃক্ষ, মনোরম লেক, লেকের মাঝে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌ বিহার, মৎস্য শিকারের সুন্দর ব্যবস্থা ও পংখীরাজ নৌকা।

 

কারুপল্লীতে বৈচিত্র্যময় দোচালা, চৌচালা ও উপজাতীয়দের আদলে তৈরি ঘরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অজানা, অচেনা, আর্থিকভাবে অবহেলিত অথচ দক্ষ কারুশিল্পীর তৈরি বাঁশ-বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশিকাঁথা, একতারা, পাট, শঙ্খ, মৃৎ শিল্প ও ঝিনুকের সামগ্রী ইত্যাদি কারুপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া প্রতি বৈশাখ মাসে এখানে সাড়ম্বরে আয়োজিত হয় লোকশিল্প মেলা। এমেলায় লোকসংগীত, যাত্রাপালা, কবিগান ইত্যাদি লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানমালা পরিবেশন করা হয়। মেলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসেন লোকজ শিল্পী ও কারুশিল্পীরা। মাটি, শোলা, বাঁশ, বেত, কাপড়সহ বিভিন্ন হস্ত শিল্পজাত সামগ্রী বিক্রি হয় এ মেলায়।  গ্রামীণ আবহে পূর্ণ মেলায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক জামদানীর হাট ছাড়াও গজা, মুড়ি মুড়কি ইত্যাদি বিভিন্ন গ্রামীণ অনুষঙ্গ পাওয়া যায়।

 

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন বুধ এবং বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে (বৃহস্পতিবার পূর্ণ দিবস বন্ধ এবং বুধবার অর্ধ দিবস খোলা থাকার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ প্রায়শই বুধবার জাদুঘর বন্ধ রাখে)। এছাড়া সপ্তাহের বাকি ৫ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। সোনারগাঁও জাদুঘরের প্রবেশ ফি ১০০ টাকা (জনপ্রতি)।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা হতে নিজস্ব পরিবহণ যেমন প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস নিয়ে সরাসরি নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও যেতে পারবেন। যদি লোকাল যানবাহনে যেতে চান তাহলে গুলিস্তান থেকে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় যাবার বিভিন্ন কাউন্টার সার্ভিস বাস পাবেন। এক্ষেত্রে স্বদেশ কিংবা দোয়েলকে বেছে নিতে পারেন। এছাড়া আপনার পছন্দমতো বাসে চড়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় নেমে ৩০ থেকে ৪০ টাকা রিক্সা বা সিএনজি ভাড়ায় লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে যেতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী এবং আশে পাশের জেলা হতে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায় তাই রাত্রিযাপন নিয়ে মোটেও ভাবতে হবে না। তবুও প্রয়োজনে রাতে থাকতে চাইলে নারায়নগঞ্জ সদরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলে রাত কাটাতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

নারায়ণগঞ্জের বিশেষ খাবারের মধ্যে কাইকারটেক হাটের পুতা মিষ্টি খেয়ে দেখতে পারেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?