দিল্লির আখড়া | Dhillir Akhra 13/01/2022


PC:


PC:Shovic

কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশত বছরের পুরনো দিল্লির আখড়া (Dhillir Akhra) অন্যতম। কিশোরগঞ্জের মনোরম একটি হাওরাঞ্চল মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নে দিল্লির আখড়ার অবস্থান। নাম দিল্লির আখড়া হলেও বাস্তবে ভারতে দিল্লির সাথে এই আখড়ার আলাদা কোন সম্পর্ক নেই। দিল্লীর সম্রাট জাহাঙ্গীরের বদান্যতায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো বিধায় এর এমন নামকরণ বলে জানা যায়। জানা যায়, দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে আধ্যাত্মিক সাধু নারায়ন গোস্বামী এই আখড়াটি স্থাপন করেন। আখড়ার ভেতরে ধর্মশালা, নাটমন্দির, অতিথিশালা, পাকশালা, বৈষ্ণবদেব থাকার ঘর, সাধক নারায়ন গোস্বামী এবং তাঁর অন্যতম শিষ্য গঙ্গারাম গোস্বামীর সমাধি রয়েছে।

 

হিজল গাছ ও দিল্লির আখড়াকে নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে গা ছমছম করা ঘটনা প্রচলিত আছে। সাধক নারায়ন গোস্বামী ছিলেন পার্শ্ববর্তী বিতলঙ্গের আখড়ার আধ্যাত্মিক সাধক রামকৃষ্ণ গোস্বামীর শিষ্য। তৎকালীন সময় চতুর্দিকে নদী পরিবেষ্টিত এই এলাকা ঘন ঝোপ-জঙ্গলে পূর্ণ ছিল। রহস্যজনক কারণে এই এলাকার নদীপথে গমনকারী নৌকাগুলো ডুবে যেতো অথবা অন্য কোন দুর্ঘটনার শিকার হত। তেমনি কোন একদিন দিল্লির সম্রাট প্রেরিত একটি কোষা নৌকা এই নদীপথে যাওয়ার সময় মালামালসহ ডুবে যায়। নৌকার আরোহীরা কোষা উদ্ধারে ব্যর্থ হন। নৌকার যাত্রীদের একজন সর্পদংশনে মারা যান। তখন বিতলঙ্গের সাধক রামকৃষ্ণ এই খবর পান। তিনি তাঁর শিষ্য নারায়ন গোস্বামীকে দুর্ঘটনার স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেন। গুরুর আর্দেশ মোতাবেক সাধক নারায়ন গোস্বামী নদীর তীরে বসে তপস্যায় মগ্ন হলে কোন এক অলৌকিক শক্তি তাঁকে হাত-পা বেধে নদীতে ফেলে দেয়। সাধক নারায়ন গোস্বামী তাঁর সাধনাবলে তীরে আসতে সক্ষম হন। এভাবে পরপর ৭ দিন একই ঘটনা ঘটে।

 

এরপর একদিন দৈব বাণীর মত নারায়ন গোস্বামী কে এই স্থান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়। উত্তরে সাধক তাদের পরিচয় ও দর্শন চান। দৈব কন্ঠ নিজেকে এখানকার বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে দানব মূর্তি ধারণ করে। নারায়ন গোস্বামী দেখতে পেলেন চারপাশে হাজার হাজার বিশালাকার দানব দৃশ্যমান হয়েছে। সাধক নারায়ন গোস্বামী দানবদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেন তারা যেন মানুষের ক্ষতি না করে বসবাস করে আর মানুষও তাদের ক্ষতি করবে না। সাধক নারায়ন গোস্বামী নির্দেশে দানবেরা হিজল গাছে পরিণত হয়।

 

সেই থেকে নারায়ন গোস্বামী প্রধান দানবের হিজলরূপী বৃরে নিচে বসে সাধন ভজন করতেন। ফলে এর নাম দেওয়া হয় ‘সাধনবৃ’ আখড়ার অদূরে এখনো রয়েছে সেই বৃটি। এর চারপাশে বর্তমানে পাকা বেষ্টনী করে রাখা হয়েছে। প্রতি অমাবশ্যা-পূর্ণিমার রাতে এখানে ভোগ দেওয়া হয়।

 

আখড়ার ৩৭২ একর জমিতে এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অদ্ভুত আকৃতির কয়েক হাজার হিজল গাছ। যা দূর দূরান্তের আগন্তুককে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে। এদিকে সাধক নারায়ন গোস্বামীর ঐশী মতা বলে সেই ডুবে যাওয়া কোষাটি মালামালসহ উঠিয়ে দেয় এবং সর্প দংশনে মৃত ব্যক্তিটিকেও বাঁচিয়ে তুলেন। পরে দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে এ খবর পৌছানোর পর তিনি এখানে এসে সাধক নারায়ন গোস্বামীর নামে বিশাল এলাকা লাখেরাজ দিয়ে একটি আখড়া প্রতিষ্ঠা করে দেন। সে থেকে আখড়াটিকে ‘দিল্লির আখড়া’ নামে পরিচিতি হয়ে আসছে।

 

সম্রাট জাহাঙ্গীর ১২১২ সালে আখড়ার নামে একটি তামার পাত্রে উক্ত জমি লিখে দেন। কিন্তু ১৩৭০ সালে ডাকাতরা এই পাত্রটি নিয়ে যায় বলে আখড়ার সেবায়তরা জানান। দিল্লির আখড়ায় প্রতি বছর ৮ চৈত্র মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলের সকলেই মেতে উঠেন উৎসবে।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ: প্রথমেই আপনাকে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে চলে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ট্রেনে সকালের এগারোসিন্ধুর প্রভাতীতে আসলে সুবিধা হবে। ট্রেন ভাড়া শ্রেণী অনুযায়ী ১২০-২০০, সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা ২০ মিনিট। ট্রেন ষ্টেশন থেকে একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ড ১৫-২০ টাকা রিকসা ভাড়ায় চলে আসলে সুবিধা হবে।

 

বাসে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ: বাসে আসতে চাইলে মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহণ বা অনন্যা ক্লাসিক এবং গোলাপবাগ (সায়েদাবাদ) থেকে আসতে চাইলে যাতায়াত বা অনন্যা সুপারে সরাসরি কিশোরগঞ্জ আসতে পারেন। বাস ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। মহাখালী থেকে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা এবং গোলাপবাগ থেকে সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল (১৫টাকা) বা রিজার্ভ ইজিবাইকে (১২০ টাকা) চলে আসুন একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ডে।

একরামপুর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় চেপে চামটা বন্দর (স্থানীয় নাম চামড়া ঘাট) চলে আসুন। চামড়া বন্দর থেকে লোকাল ও রিজার্ভ নেয়ার জন্য ট্রলার ও নৌকা পাবেন।

একই ভাবে কিশোরগঞ্জ শহরের একরামপুর মোড় থেকে বালিখোলা অথবা মরিচখালি বাজারে এসে ট্রলার বা নৌকা রিজার্ভ নিয়ে দিল্লির আখড়া দেখতে যেতে পারবেন। চামড়া বন্দর, বালিখোলা, মরিচখালি এই তিন স্থান হতে দিল্লির আখড়া যাওয়ার সুযোগ থাকলেও চামটা বন্দর থেকে দিল্লীর আখড়া যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক।

 

কোথায় থাকবেন?

মিঠামইন উপজেলায় থাকার খুব ভালো ব্যবস্থা নেই। যদি থাকতে চান তাহলে উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে থাকতে পারবেন। এছাড়া মিঠামইন বাজার এলাকায় শিকদার হোটেল ও সোহেল গেস্ট হাউজ থাকার ব্যবস্থা আছে। ভালো কোথাও থাকতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সদরে রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, উজানভাটি, ক্যাসেল সালাম নামে বেশ কিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল রয়েছ। এছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে জেলা সদরের সরকারি ডাক-বাংলোতে থাকতে পারবেন।

 

কি খাবেন?

বাজারের স্থানীয় খাবার হোটেলে চেখে দেখতে পারেন হাওরের বিভিন্ন স্বাদের মাছ। মিঠামইনের খাবার হোটেলগুলোতে সাধারণত হাওরের তাজা মাছ রান্না করা হয়।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?