শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান | Sholakia Eidgah 13/01/2022


PC:


উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে (Sholakia Eidgah)। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ ময়দান। ১৭৫০ সাল থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া।

 

ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া ‘সাহেব বাড়ির’ পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন।ওই জামাতে ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই। অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসললিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে এর নাম হয় ‘সোয়া লাখি’। পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া সেখান থেকে শোলাকিয়া। পরবর্তিতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় হয়বতনগর দেওয়ান পরিবারের অন্যতম দেওয়ান মান্নান দাদ খানের বদান্যতায় এ মাঠের কলেবর বৃদ্ধি পায় এবং এবং এর পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। দেওয়ান মান্নান দাদ খান ছিলেন বীর ঈশা খাঁর অধঃস্তন বংশধর।

 

জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া ঈদগাহ ময়দানে আগত মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জামাত শুরুর সংকেত হিসেবে এ মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি শটগানের গুলি ছোড়া হয়। নামাজ শেষে দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহ্‌র জন্য মঙ্গল কামনা করে মুনাজাত পরিচালনা করা হয়। ১৮২৮ সালের প্রথম বড় জামাতে হয়বতনগর সাহেব বাড়ির ঊর্ধ্বতন পুরুষ শাহ্‌ সূফী সৈয়দ আহমদ (রঃ) ইমামতি করেন। এ সম্পর্কে নানা তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে, শাহ্‌ সূফী সৈয়দ আহমদ (রঃ) এর পূর্ব-পূরুষগণ সুদূর মক্কা শরীফ থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করে বর্তমান ভারতের বর্ধমান জেলার টেঙ্গাপাড়ায় বসবাস শুরু করেন।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে আসতে চাইলে ট্রেনে অথবা বাসে করে কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশান থেকে সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে উঠলে ১১ টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ পৌঁছে যাবেন। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ট্রেনের টিকেট কাটতে শ্রেনী ভেদে ১২৫ টাকা থেকে ২৫০ টাকা লাগে। কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশনে নেমে ২৫ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে সহজেই চলে যেতে পারবেন শোলাকিয়া ময়দানে।

 

আর বাসে করে আসতে চাইলে ঢাকার মহাখালী বা গোলাপবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে কিশোরগঞ্জ গামী যেকোন বাসে করে কিশোরগঞ্জের গাইটাল বাস চলে আসুন। এরপর ৪০টাকা রিক্সা ভাড়া বা লোকাল ইজিবাইকে ১০টাকা ভাড়ায় চলে আসুন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে।

 

ঈদে স্পেশাল সার্ভিস : ঈদের জামাত পড়তে চাইলে আপনি যদি দূর থেকে আসেন তাহলে আপনার উচিৎ হবে আগের দিনই চলে আসা। এছাড়া ঈদের জামাতের জন্যে ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু থাকে। ঈদের দিন খুব সকালে স্পেশাল ট্রেন দুটি কিশোরগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। একসাথে অনেকজন মিলে আসলে বাস কিংবা কোন প্রাইভেট গাড়ি রিজার্ভ করেও চলে আসতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

রাতে থাকতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সদরের স্টেশন রোড এলাকায় রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, উজানভাটি, ক্যাসেল সালাম নামে বেশ কিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল রয়েছ। এছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে জেলা সদরের সরকারি ডাক-বাংলোতে থাকতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

কিশোরগঞ্জ শহরে ধানসিঁড়ি, দারুচিনি, গাংচিল, ইস্টিকুটুম, তাজ, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে পছন্দের খাবার খাওয়া। মিষ্টি পাগল হলে ছেঁকে দেখতে পারেন একরাম্পুরের লক্ষী নারায়ণ মিস্টান্ন ভান্ডারে কিংবা মদন গোপালে।

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?