জঙ্গলবাড়ি দূর্গ | Jangalbari Fort 13/01/2022


PC:


আমাদের দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা আমাদের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে এখনো স্ব-মহিমায় নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়িটি (Isha Khan's Jangalbari Fort) এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিশোরগঞ্জে। জঙ্গলবাড়ি দূর্গ কিশোরগঞ্জজেলা থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নে অবস্থিত। বাংলার বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈশা খাঁ জঙ্গলবাড়ির দুর্গে তাঁর দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন।

 

জানা যায় মুঘল সম্রাট ও ইংরেজদের শোষণে অসহায় বাংলার জমিদারদের গোপন আমন্ত্রণ পেয়ে ঈশা খাঁ আফগানিস্তান থেকে ১৪০০ জন ঘোড়সওয়ার, ২১ টি নৌবিহার ও অজস্র গোলাবারুদ নিয়ে তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যে আসেন। ১৫৮৫ সালে কোচ রাজা লক্ষ্মণ হাজরা ও রাম হাজরাকে পরাজিত করে জঙ্গলবাড়ি দুর্গটি দখল করেন এবং এখানেই তিনি তার রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। দুর্গটি দখলের পর ঈশা খাঁ দুর্গের ভিতরে কিছু স্থাপনা নির্মাণ করেন এবং তিনদিকে পরিখা খনন করে নরসুন্দা নদীর সাথে যুক্ত করে দুর্গটিকে গোলাকার দ্বীপে রুপান্তর করেন। তবে মূল জঙ্গলবাড়ি দুর্গটি প্রাক-মুসলিম যুগে নির্মিত বলে ধারনা করা হয়। পরবর্তীতে এই দুর্গ থেকেই ঈশা খাঁ সোনারগাঁওসহ মোট ২২টি পরগণা দখল করে নেন। বাংলা ১৩২৬ সনের ভূমিকম্পে দুর্গটির দরবার হল, বসত ঘর ও একটি মসজিদ ছাড়া প্রায় সকল স্থাপনাই ধ্বংস হয়ে যায়। 

 

দুর্গ এলাকার বাইরে অসংখ্য ইটের টুকরা ও মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ রয়েছে। এগুলো সম্ভবত প্রাক-মুসলিম আমলের এবং এটি ছিল একটি সমৃদ্ধশালী জনবসতির কেন্দ্র। বাড়ির সামনে রয়েছে তখনকার আমলের খনন করা একটি দীঘি। পাশেই রয়েছে মসজিদ। ধারণা করা হয়, ঈশা খাঁ কর্তৃক এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। ৪৪ ফুট দীর্ঘ এবং ১৮ ফুট প্রশস্ত বিশিষ্ট আয়তকার এই মসজিদের ছাদে তিনটি বড় বড় গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের প্রতিটি কোণেই সুদৃশ্য মিনার রয়েছে। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় চার ফুট প্রশস্ত। মসজিদের পূর্ব পাশে ১১ ফুট খোলা একটি বারান্দা রয়েছে।  এখনো এই মসজিদে নামায আদায় করা হয়। এই দুর্গের কিছু অংশ সংস্কার করে ঈশা খাঁ স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। এই জাদুঘরে ঈশা খাঁর ব্যবহ্রত বিভিন্ন জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে কিশোরগঞ্জ আসতে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশান থেকে সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে উঠলে ১১ টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ পৌঁছে যাবেন। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ট্রেনের টিকেট কাটতে শ্রেনী ভেদে ১২৫ টাকা থেকে ২৫০ টাকা লাগে। তারপর ইজিবাইক দিয়ে মাত্র ৫ টাকা ভাড়ায় চলে আসুন শহরের কেন্দ্রস্থ একরামপুর মোড়ে।

 

আর বাসে করে আসতে চাইলে ঢাকার মহাখালী বা গোলাপবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে কিশোরগঞ্জ গামী যেকোন বাসে করে কিশোরগঞ্জের গাইটাল বাস চলে আসুন। এরপর রিক্সা বা ইজিবাইকে চলে আসুন শহরের একরামপুর মোড়ে। ইজিবাইকে ১০ টাকা ও রিক্সায় ২৫ টাকা ভাড়া লাগবে।

 

একরামপুর মোড় থেকে সিএনজি, রিক্সা বা ইজিবাইকে চড়ে সহজেই যেতে পারবেন জঙ্গলবাড়ি দুর্গ বা ঈশা খাঁর বাড়ি দেখতে। লোকাল ইজিবাইক ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২০টাকা। রিজার্ভ করতে চাইলে যাওয়া আসা সহ খরচ লাগবে ৩৫০-৪৫০ টাকা।

 

কোথায় থাকবেন?

জঙ্গলবাড়ি দুর্গের আশেপাশে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। রাতে থাকতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সদরে ফিরে আসতে হবে। কিশোরগঞ্জ সদরের স্টেশন রোড এলাকায় রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, উজানভাটি, ক্যাসেল সালাম নামে বেশ কিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল রয়েছ। এছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে জেলা সদরের সরকারি ডাক-বাংলোতে থাকতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

জঙ্গলবাড়ি দূর্গ এর আশেপাশে ভালো খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। দূর্গের কাছেই জঙ্গলবাড়ী বাজারে ছোট খাটো হোটেল আছে। চাইলে ভাত, মা্‌ সবজী ও স্থানীয় কিছু খাবার পাবেন। ভাল হয় কিশোরগঞ্জ শহরে ফিরে ধানসিঁড়ি, দারুচিনি, গাংচিল, ইস্টিকুটুম, তাজ, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে পছন্দের খাবার খাওয়া। মিষ্টি পাগল হলে ছেঁকে দেখতে পারেন একরাম্পুরের লক্ষী নারায়ণ মিস্টান্ন ভান্ডারে কিংবা মদন গোপালে।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?