ধনবাড়ি নওয়াব শাহী জামে মসজিদ | Dhanbari Nawab Shahi Jame Mosque 27/12/2021


PC:


PC:Sultan Ahmed Niloy

ধনবাড়ি নওয়াব শাহী জামে মসজিদ (Dhanbari Nawab Shahi Jame Mosque) বা ধনবাড়ী মসজিদ (Dhanbari Mosque) টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলা ও পৌরসভায় অবস্থিত। ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিলের রয়েল রিসোর্টের পাশে শোভা বৃদ্ধি করে আছে প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি। মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ধনবাড়ি মসজিদের মোজাইক ও মেঝের মার্বেল পাথরে নিপুণ কারুকার্য স্থান পেয়েছে। প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপরে নির্মিত এই ধনবাড়ি মসজিদ আগে দেখতে আয়তকার হলেও বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের পর বর্তমানে এটি দেখতে বর্গাকৃতির রুপ লাভ করেছে।

 

ষোড়শ শতাব্দীতে সেলজুক তুর্কি বংশের ইসপিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ দুই ভাই ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির প্রথম খণ্ড (এক কক্ষ বিশিষ্ট মসজিদ) নির্মাণ করেন। জনশ্রুতিতে জানা যায়, সম্রাট আকবরের সময় এ দুই ভাই ধনবাড়ির অত্যাচারী জমিদারকে পরাজিত করার পর এ অঞ্চলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। বাংলাভাষার প্রথম প্রস্তাবক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যুক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ধনবাড়ির বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী প্রায় ১২০ বছর আগে এ মসজিদটি সম্প্রসারণ করে আধুনিক রূপ দেন।

 

মসজদিটির চর্তুদিক থেকে ৪টি প্রবেশ পথ এবং ৯টি জানালা রয়েছে। ৩৪টি ছোট ও বড় গম্বুজ রয়েছে। বড় ১০টি মিনারের প্রত্যেকটির উচ্চতা ছাদ থেকে প্রায় ৩০ ফুট সুউচ্চ। কেন্দ্রীয় মিহরাবের কুলুঙ্গিটি অষ্টভুজাকৃতির ও বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানযুক্ত এবং ফুলের নকশায় অলংকৃত রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় মিহরাবের দুইপাশে আরো দুটি অলংকারহীন মিহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবের পাশে চীনামাটির মোজাইক নকশায় অলংকৃত একটি মিম্বার রয়েছে। মসজিদের সংরক্ষিত কক্ষে শোভা পাচ্ছে ১৮টি হাড়িবাতি। যা নারিকের তৈল দ্বারা আলোর কাজে ব্যবহৃত হতো। রয়েছে মোঘল আমলে ব্যবহৃত ৩টি ঝাড়বাতিও।

 

মসজিদ নির্মাণে চুন, সুরকি, সাদা সিমেন্ট, কড়ি পাথর, লোহার খাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। এ মসজিদের পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো ঘাট ও কবরস্থান। যেখানে দাফন করা হয়েছে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। মসজিদর পাশে রয়েছে ৭ বিঘা আয়তনের এক বিশাল দীঘি এবং দিঘির অন্য পাড়ে অবস্থিত ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিল। নবাব নওয়াব আলী মৃত্যুর আগে তার এ স্টেট ওয়াকফ করে যান।

 

ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিলে প্রবেশ করতে ৩০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হয়, যা নবাব মঞ্জিলে প্রবেশ পরবর্তী দুই ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকার মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে বিনিময় পরিবহন ধনবাড়িতে ঠিক রাজবাড়ির সামনেই থামে। তবে লোকাল সার্ভিস হওয়ার কারণে ধনবাড়ি পৌছাঁতে প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়া মহাখালি থেকে নিরালা পরিবহণের বাসে ১৬০ টাকা ভাড়ায় টাঙ্গাইলে গিয়ে সিএনজি বা অটোরিকশা করে রাজবাড়িতে যাওয়া যায়।

 

কোথায় থাকবেন?

যদি এখানে রাত্রিযাপন করতে চান তবে ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিল রিসোর্টে থাকতে পারবেন। এই রিসোর্টে চার ধরনের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে থাকতে পারবেন নবাব মঞ্জিলের মূল রাজপ্রাসাদ, প্যালেস বা কাচারি ঘর, ভিলা (২০০ বছরের পুরোনো টিনশেড ভবন) এবং কটেজে (যা সম্প্রতি নির্মিত টিনশেড বাংলো)। শুধুমাত্র মঞ্জিল এবং প্যালেসে নবাবদের ব্যবহৃত খাট, সোফাসহ সব আসবাবপত্র পাবেন।

 

টাঙ্গাইল শহরে থাকতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ ও এলজিইডির সরকারি রেস্ট হাউজ আছে। সেগুলিতে যোগাযোগ করে রাতে থাকতে পারবেন। টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ের দিকে আল ফয়সাল হোটেল রেসিডেনসিয়াল, হোটেল সাগর রেসিডেনসিয়াল, আফরিন হোটেল, এস এস রেস্ট হাউজ, সুগন্ধা হোটেল, নিরালা হোটেল ইত্যাদি বিভিন্ন মানের হোটেলে রাতে থাকতে পারবেন। এছাড়া মধুপুর উপজেলা সদরে সৈকত, আদিত্য কিংবা ড্রিমটাচ আবাসিক হোটেলে এসি এবং নন-এসি রুমে স্বল্পমূল্যে রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

টাঙ্গাইল খাওয়ার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে শহরের নিরালা মোড়ে অবস্থিত হোটেল নিরালা বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। এছাড়াও নিরালা মোড়ে কাছাকাছি দূরত্বে আরো কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে।

 

  

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?