পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি | Pakutia Zamidar Bari 27/12/2021


PC:


প্রাচীন জমিদার বাড়ি মানেই অপূর্ব কারুকাজ করা বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে সৌন্দর্য আর ইতিহাসের ছোঁয়া মাখা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জমিদার বাড়িগুলো তাই একেকটি অতীতের কাব্য। একটা সময় বাংলাদেশে অনেক জমিদার বসবাস করতেন, কালের বিবর্তনে বর্তমানে জমিদারদের জমিদারি না থাকলেও এখনো তাদের তৈরি জমিদার বাড়ি গুলো ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে বছরের পর বছর। টাঙ্গাইলের  জেলার নাগরপুর উপজেলায় প্রাচীন লৌহজং নদীর তীরে  অবস্থিত এমনই একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি (Pakutia Zamidar Bari)।

 

 

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইংরেজদের কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডল পাকুটিয়ায় জমিদারী শুরু করেন। তিনি কলকাতার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর ছিল দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধা গোবিন্দ। রাধা গোবিন্দ ছিলেন নিঃসন্তান এবং বৃন্দাবন চন্দ্রের ছিল তিন ছেলে। এরা হলেন- ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন। বৃন্দাবনের মেজছেলে উপেন্দ্রকে তাঁর কাকা নিঃসন্তান রাধা গোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র মোহন দত্তক সন্তান হিসাবে কাকার জমিদারীর পুরো সম্পদের অংশটুকু লাভ করেন।

 

১৯১৫ সালের ১৫ই এপ্রিল প্রায় ১৫ একর এলাকা জুড়ে তিন ভাইয়ের নামে উদ্ভোদন করা হয় একই নকশার পর পর তিনটি প্যালেস বা অট্টালিকা। পাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি তিন মহলা বা তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। প্রতিটি মহলের রয়েছে নিজস্ব সৌন্দর্য, লতাপাতার চমৎকার কারুকাজ গুলো মুগ্ধ করার মতো। প্রতিটি জমিদার বাড়ীর মাঝ বরাবর মুকুট হিসাবে লতা ও ফুলের অলংকরণে কারুকার্য মন্ডিত পূর্ণাঙ্গ দুই সুন্দরী নারী মূর্ত্তি এবং সাথে এক মূয়ূর সম্ভাষণ জানাচ্ছে অথিতিকে। এছাড়া দ্বিতীয় তলার রেলিং টপ বা কার্নিশের উপর রয়েছে পাঁচ ফুট পর পর বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ছোট আকৃতির নারী মূর্ত্তি। এই তিনটি স্থাপনাই অপূর্ব শিল্প সুষমামণ্ডিত।

 

পাশ্চাত্য শিল্প সংস্কৃতির অনুসরণে সমৃদ্ধ স্থাপত্যশৈলীতে গড়ে তোলা এই অট্টালিকাগুলো অনন্য এক সৃষ্টি। তিনটি প্রাসাদের সামনেই রয়েছে তিনটি নাট্য মন্দির। পূজা মণ্ডপের শৈল্পিক কারুকাজ শোভিত এই নাট্য মন্দিরগুলো পর্যটকদের মোহিত করে। জমিদার বাড়ির সামনে রয়েছে বিশাল মাঠ আর মাঠের মাঝখানে রয়েছে দ্বিতল নাচঘর। জনশ্রুতি আছে, টিনের ও কাঠের তৈরি এই নাচঘরে বসে এখানকার জমিদাররা সে সময় নাচ দেখতো। জমিদার বাড়ির আশে পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় কূয়া। সেসময় জমিদার বাড়ির রান্নাসহ নানা কাজে এ সকল কূয়ার পানি ব্যবহার করা হতো। এখানে আরো আছে কালীমন্দির এবং দক্ষিণ দিকে আছে বিশাল দীঘি, যার নাম উপেন্দ্র সরোবর। রায় বাহাদুর সতীশ চৌধুরীর বাবার নামে এটির নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি পাকুটিয়া বিসিআরজি ডিগ্রি কলেজ এর প্রশাসনিক ভবন ও ক্লাস রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৯৬৭ সালে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে গেলে সবচেয়ে ভালো হবে গাবতলী থেকে পাকুটিয়া গামী এস বি লিংক পরিবহণে গেলে। সাটুরিয়া পার হয়ে পাকুটিয়া বাজারে নেমে সেখান থেকে হাঁটা দূরত্বে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। এছাড়া ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিনিময়, ঝটিকা, ধলেশ্বরী ইত্যাদি বাস টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে নিয়মিত যাত্রা করে।

 

কোথায় থাকবেন?

টাঙ্গাইলে থাকার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ ও এলজিইডির সরকারি রেস্ট হাউজ আছে। সেগুলিতে যোগাযোগ করে থাকতে পারবেন। আর যদি হোটেলে রাত্রিযাপন করতে চান তবে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ের দিকে বেশ কিছু বিভিন্ন মানের হোটেলে রাতে থাকতে পারবেন।

 

কি খাবেন?

টাঙ্গাইল খাওয়ার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে শহরের নিরালা মোড়ে অবস্থিত হোটেল নিরালা বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। নিরালা মোড়ের কাছাকাছি দূরত্বে কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের বিখ্যাত পোড়াবাড়ির চমচম খেতে ভুলে যাবেন না।

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?