সাগরদীঘি | Sagardighi 28/12/2021


PC:


PC:Prasanta Kr Dutta

টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার পূর্বে ঘাটাইল উপজেলায় ঐতিহাসিক এই সাগরদীঘি (Sagardighi) অবস্থিত। প্রায় ১৩ একর জায়গা জুড়ে পাল বংশীয় সাগর রাজার নেতৃত্বে এই বিখ্যাত দীঘিটি খনন করা হয়। সাগরদীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এলাকার পূর্ব নাম “লোহিনি” হলেও বর্তমানে এটি সাগরদীঘি নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই দিঘির পশ্চিমপাড়ে শান বাঁধানো ঘাটলার ধ্বংসাবশেষ এখনও লক্ষ করা যায় যা সাগর রাজার বাসস্থান বলে ধারণা করা হয়।

 

আনুমানিক অষ্টম শতকে মহীপালের রাজত্বকালে এই দীঘি খনন করা হয়েছিল।
জনশ্রুতি আছে, রাজা মহীপাল ব্রহ্মহত্যার প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য এই জলাশয় খনন করেছিল। একদা রাজা মহীপাল উত্তরবঙ্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে চলে আসেন উত্তর রাঢ়ে। পরিবার পরিজন, কূল পুরোহিত ও অনুগত প্রজাদের সঙ্গে নিয়ে রাঢ় দেশের চন্দনবাটিতে রাজধানী স্থাপনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথে তাঁর রানীকে দেখতে গিয়ে এক ব্রাহ্মণ সন্তান গাছ থেকে পড়ে মারা যান। ওই ঘটনায় রাজা দুঃখিত হয়েছিলেন এবং ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য কুলপুরোহিতের কাছে বিধান চেয়েছিলেন। কুলপুরোহিত বলেছিলেন যে, রাজমহিষীর রূপ-লাবণ্য ব্রহ্মহত্যার কারণ। তাই রানীকে ওই ব্রাহ্মণ যুবকের মৃত্যুর স্থান থেকে পায়ে হেঁটে রাজধানীর দিকে যেতে হবে এবং রানীর হেঁটে যাওয়া রাস্তার দৈঘ্য সমান জলাশয় খনন করতে হবে। জলাশয় খননের পর জল ওঠেনি। পরে স্বপ্নাদেশে সাগর নামে এক ধর্মপরায়ণ স্থানীয় কুমোর এসে এক কোদাল মাটি কাটতে দীঘিতে জল ওঠে। এর জন্য তাঁকে দীঘির জলে আত্মবিসর্জন দিতে হয়। সেই কারণে এই দীঘির নাম হয়েছিল সাগরদীঘি বা সাগর কুমোরের দীঘি। আর এই দীঘির নাম থেকেই এলাকার নাম হয় সাগরদীঘি।

 

আরেকটি প্রবাদ হলো, সাগর রাজা মানুষের জলাবদ্ধতা দূর করতে এই জলাশয়টি খনন করেছিলেন। খননের পরে পুকুরে কোনও জল বাড়েনি, বাদশাকে স্বপ্নে রাণীকে হ্রদে বলি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে রানিকে হ্রদে নামানোর পরে তার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে আছে সাগর দীঘি উচ্চ বিদ্যালয় এবং সাগরদীঘি দাখিল মাদ্রাসা। এছাড়াও দীঘির দক্ষিণ পাশে সাগর রাজার পুত্র বনরাজ পাল প্রায় ২৫ একর জায়গার উপর আরেকটি দীঘি খনন করেন, যা “বইন্যা দীঘি” নামে পরিচিত।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকার মহাখালি বা কল্যাণপুর থেকে নিরালা, বিনিময়, ঝটিকা, সকাল সন্ধ্যা, সোনিয়া, দ্রুতগামী ও ধলেশ্বরীর মতো এসি/নন-এসি বাস অথবা ধনবাড়িগামী বাসে চড়ে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট নামতে হবে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে অটো বা সিএনজি নিয়ে সহজেই সাগরদীঘি যেতে পারবেন। বাস ভেদে ভাড়া পড়বে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা।

 

কোথায় থাকবেন?

ঢাকা থেকে ঘাটাইলের সাগরদীঘি ঘুরে এক দিনেই ঢাকায় ফিরে আসতে পারবেন। প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতে চাইলে ঘাটাইল শহরে শাপলা আবাসিক হোটেল, বনসাই আবাসিক এবং মিতালি গেস্ট হাউজের মতো কিছু মধ্যম মানের আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। এছাড়া টাঙ্গাইল শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল, রেস্ট হাউজ এবং রিসোর্ট রয়েছে।

 

কোথায় খাবেন?

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের অবস্থিত হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মধ্যে ধানসিঁড়ি হোটেল, হোটেল ৫ স্টার, প্রাপ্তি রেস্তোরা, শান্তর হোটেল ও রবির হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঘাটাইল শহর থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে পোড়াবাড়ির বিখ্যাত চমচম খেতে ভুলবেন না।

 

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?