ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
টাঙ্গাইলের গোপালপুরের হেমনগরে প্রায় ৬০ একর জায়গা জুড়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হেমনগর জমিদার বাড়ি। গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে হেমনগর। ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটি স্থানীয়দের কাছে পরীর দালান (Porir Dalan) হিসেবে পরিচিত। ১৮৯০ সালে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী সৌন্দর্যমন্ডিত এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। খানে পরীদের আবাস্থল বা পরীদের নির্মিত ভবনের দেখা পাওয়া না গেলেও দিল্লি ও কলকাতার কারিগর দ্বারা তৈরি সুন্দর কারুকার্যমণ্ডিত স্থাপনা আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। পরীর দালানের দেয়াল, পিলার এবং দরজায় রঙ্গিন কাচে তৈরি ফুল, লতা, তারা, গাছের নকশা, দামি কড়ি ও পাথরে সুসজ্জিত দুইটি পরীর ভাস্কর্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজবাড়ির উপর নির্মিত দুইটি রাজসিক পরীর ভাস্কর্যের কারণেই মূলত এই দালানের নাম হয় এঞ্জেল হাউজ বা পরীর দালান।
প্রায় ১৩০ বছর পুরনো এই জমিদার বাড়িটি অষ্টাদশ শতাব্দীর কারুকাজ শোভিত দারুণ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, হেমনগরের জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরীর পিতা কালিবাবু চৌধুরী ছিলেন ব্যবসায়ী। কালিবাবু চৌধুরী সূর্যাস্ত আইনের আওতায় শিমুলিয়া পরগণার জমিদারি কিনে নেন। কালিবাবু চৌধুরীর চার ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে হেমচন্দ্র চৌধুরী ছিল বড়। তিনি জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব পাওয়ার পর ময়মনসিংহ জেলার মধুপুর উপজেলার অন্তর্গত আম্বারিয়া এস্টেটে জমিদার বাড়ি বানান এবং জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন। কিন্তু আম্বারিয়া থেকে যমুনার পূর্বপাড় এবং সেখান থেকে মধুপুর গড় পর্যন্ত বিশাল এলাকার জমিদারি তার পক্ষে পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই তিনি গোপালপুর উপজেলার সুবর্ণখালী নামক গ্রামে দ্বিতীয় জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর নদী ভাঙনে সুবর্ণখালী বিলীন হতে থাকলে তিনি শিমলাপাড়া গ্রামে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন এবং নিজ নামে এই এলাকার নামকরণ করেন হেমনগর।
চারপাশে সীমানা প্রাচীর ঘেরা হেমনগর রাজবাড়ীর প্রাঙ্গনে পৃথক তিনটি ভবন, ২৫ টি বিভিন্ন ধরনের কক্ষ, শান বাঁধানো পুকুর ঘাট, খেলার মাঠ এবং কয়েকটি পাসা কুয়া রয়েছে। আর দালানের কাছেই আছে ৭ টি সুরম্য ভবন, যা জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরীর তিন বোন ও আত্মীয়ের বাড়ি হিসাবে পরিচিত। জমিদার বাড়ির সামনে রয়েছে বিরাট মাঠ। এই মাঠ পেরিয়ে সামনের ভবনটি ছিলও জমিদার হেমচন্দ্রের দরবার ঘর। দু-পাশে সারি-সারি ঘরগুলো নিয়ে গড়ে উঠেছে চতুর্ভুজাকার জমিদার বাড়ি। এর সামনের অংশটা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। এই অংশে ইসলামিক আর্চ আর গ্রিক কোরানথিয়ান পিলালের চমৎকার মিশ্রণ দেখা যায়। চিনি টিকরী অলংকরণে এর সৌন্দর্য বেড়েছে বহুগুণ। এছাড়া পরীর দালান থেকে ৩ কিলোমিটার জুড়ে বেশ কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে। বর্তমানে পরীর দালান হেমনগর ডিগ্রি কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং রাজবাড়ির কাছে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজার।
কিভাবে যাবেন?
টাঙ্গাইল থেকে হেমনগর রাজবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং গোপালপুর থেকে রাজবাড়ির দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। টাঙ্গাইল হতে বাস বা সুবিধাজনক পরিবহণে গোপালপুর এসে সিএনজি বা অটোরিকশায় চড়ে হেমনগর রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন হেমনগর রাজবাড়ি বা পরীর দালান আসতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন?
ঢাকা থেকে চাইলে এক দিনেই পরীর দালান ঘুরে ফিরে যেতে পারবেন। প্রয়োজনে রাত্রিযাপন বা টাঙ্গাইলের অন্যান্য জায়গা ঘুরে দেখতে চাইলে হোটেলে থাকতে হতে পারে। টাঙ্গাইলে উল্লেখযোগ্য আবাসিক হোটেলের মধ্যে- আফরিন হোটেল, হোটেল সাগর রেসিডেন্সিয়াল, এস এস রেস্ট হাউজ, পলাশ হাউজ, সুগন্ধা হোটেল, নিরালা হোটেল, হোটেল কিছুক্ষণ, হোটেল প্রিন্স উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও থাকতে পারেন এলেঙ্গা কিংবা যমুনা রিসোর্ট-এর মতো আকর্ষনীয় জায়গায়।
কোথায় খাবেন?
টাঙ্গাইল খাওয়ার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে শহরের নিরালা মোড়ে অবস্থিত হোটেল নিরালা বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। নিরালা মোড়ের কাছাকাছি দূরত্বে কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের বিখ্যাত পোড়াবাড়িরি চমচম খেতে ভুলে যাবেন না।