লালবাগ কেল্লা | Lalbagh Fort 10/01/2022


PC:


PC:Emdad Tafsir

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল লালবাগে ১৭শ শতকে নির্মিত লালবাগ কেল্লা (Lalbagh Fort) অবস্থিত। লালবাগ কেল্লা বাংলাদেশের মোঘল আমলের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন, যেখানে একই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টিপাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রঙ-বেরঙের টালি যা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শনে এক বৈচিত্র্যময় সংমিশ্রণ।  শুরুতে লালবাগ কেল্লার নাম দেয়া হয়েছিল আওরঙ্গবাদ দূর্গ বা আওরঙ্গবাদ কেল্লা। ১৮৪৪ সালে আওরঙ্গবাদ এলাকাটির নাম পরিবর্তন করে লালবাগ রাখা হয়। এলাকার নামের সাথে সাথে কেল্লাটির নামও পরিবর্তিত হয়ে হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।

 

তৎকালীন মুঘল সম্রাট আজম শাহ ১৬৭৮ সালে লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেন। আজম শাহ ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর পুত্র এবং সম্রাট শাহজাহানের নাতি। যদিও আজম শাহ খুব কম সময়ের জন্যে মুঘল সম্রাট হিসেবে ছিলেন তবুও তার অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এই অসাধারণ কাজটি শুরু করেন। দুর্গ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছরের মাথায় বাবার ডাকে তাকে দিল্লিতে চলে যেতে হয় সেখানকার মারাঠা বিদ্রোহ দমন করবার জন্যে। সম্রাট আজম শাহ চলে যাওয়ার পর দুর্গ নির্মাণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেলে তা আদৌ সম্পূর্ণ হবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। কিন্তু সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রায় এক বছর পরে তৎকালীন নবাব শায়েস্তা খাঁ পুনরায় লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করে দেন।

 

তবে শায়েস্তা খাঁ পুনরায় কাজ শুরু করার প্রায় চার বছরের মাথায় নবাব শায়েস্তা খাঁ এর মেয়ে পরী বিবি মারা যাওয়ার কারণে দুর্গের নির্মাণ কাজ আবার বন্ধ হয়ে যায়, এরপর দুর্গটি নির্মাণের কাজ আর শুরু করা হয়নি। পরী বিবির মৃত্যুর পর তাকে লালবাগ দুর্গের মাঝেই সমাহিত করা হয়, আর এরপর থেকে একে পরী বিবির সমাধি নামে আখ্যায়িত করা হয়। পরী বিবির সমাধির যে গম্বুজটি আছে তা একসময় স্বর্ণখোচিত ছিল, কিন্তু এখন আর তেমনটি নেই, তামার পাত দিয়ে পুরো গম্বুজটিকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে যে দরজাটি বর্তমানে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া, সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়বে পরী বিবির সমাধি। লালবাগ কেল্লা চত্বরে আরো রয়েছে দরবার হল ও হাম্মামখানা, উত্তর-পশ্চিমাংশের শাহি মসজিদ। আজম শাহ দিল্লি চলে যাওয়ার আগে এই মসজিদটি তৈরি করে গিয়েছিলেন। ঢাকায় এত পুরোনো মসজিদ খুব কমই আছে।

 

লালবাগ কেল্লার দরবার হল ও হাম্মামখানাটি বর্তমানে সর্বসাধারণের দেখার জন্য একটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে, যা পূর্বে নবাব শায়েস্তা খাঁর বাসভবন ছিল আর এখান থেকেই তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। জাদুঘরে রয়েছে মোগল আমলের পাণ্ডুলিপি, মৃৎশিল্প, কার্পেট, হস্তলিপি ও রাজকীয় ফরমান। শায়েস্তা খাঁর ব্যবহার্য নানান জিনিসপত্রও সেখানে সযত্নে আছে। তা ছাড়া তৎকালীন বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক, সে সময়কার প্রচলিত মুদ্রা রয়েছে জাদুঘরে। তিনশ বছরের পুরোনো স্থাপনা ও সে সময়ের সম্রাটের ব্যবহৃত নানা জিনিস দেখতে পারাটা সৌভাগ্যের, সে সঙ্গে বিস্ময়েরও বটে। লালবাগ কেল্লায় সম্রাটের ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখতে দেখতে আপনিও হারিয়ে যাবেন মোগল শাসকদের আমলে।

 

৫ বছর বয়সের নীচে বাচ্চাদের লালবাগ কেল্লা প্রবেশের জন্য কোন টিকেট লাগেনা। দেশী দর্শনার্থীদের কেল্লায় প্রবেশ করতে জনপ্রতি ১০ টাকায় টিকেট কাটতে হয় এবং বিদেশী পর্যটকদের টিকেটের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা লাগে। সপ্তাহের রবি ও সোমবার যথাক্রমে পূর্ণ ও অর্ধ দিবসের জন্য লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে। এছাড়াও সকল বিশেষ সরকারী ছুটির দিনে লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে। কাল ও মাস ভেদে লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনের সময়সূচি পরিবর্তিত হয়।

 

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস (গ্রীষ্মকালে)

রবিবার – সাপ্তাহিক বন্ধ
সোমবার – দুপুর ২ঃ৩০ থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত
শুক্রবার – সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ টা (মাঝে দুপুর ১২ঃ৩০ থেকে ২টা পর্যন্ত বন্ধ)
সপ্তাহের বাকি দিন – সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬ টা (মাঝে দুপুর ১ঃ০০ থেকে ১ঃ৩০ পর্যন্ত বন্ধ)

অক্টোবর থেকে মার্চ (শীতকালে)

রবিবার – সাপ্তাহিক বন্ধ
সোমবার – দুপুর ২ঃ৩০ থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত
শুক্রবার – সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা (মাঝে দুপুর ১২ঃ৩০ থেকে ২টা পর্যন্ত বন্ধ)
সপ্তাহের বাকি দিন – সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা (মাঝে দুপুর ১ঃ০০ থেকে ১ঃ৩০ পর্যন্ত বন্ধ)

 

কিভাবে যাবেন?

লালবাগ কেল্লায় যেতে হলে, গুলিস্তান গোলাপ শাহ্ এর মাজার থেকে টেম্পুযোগে মাত্র ৬ টাকায় যাওয়া যাবে লালবাগ কেল্লায়। ইসলামবাগ ও কিল্লার মোড়গামী দু’ধরনের টেম্পো দিয়ে দিন রাত সব সময় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়। এছাড়াও নিউমার্কেট কিংবা গুলিস্তান এলাকা থেকে সরাসরি রিক্সায় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়। ভাড়া পড়বে ৩০-৪০ টাকা।

 

 

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?