চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির | Chandranath Hill and Temple 02/05/2021


PC:


চন্দ্রনাথ মন্দির সীতাকুণ্ডুর সেই সৌন্দর্যগুলির মধ্যে অন্যতম যা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ার উপরে উল্লেখযোগ্য স্থাপনার পাশাপাশি প্রাচীন হিন্দু ধর্মের একটি গল্প নিয়ে বেড়ায়। মন্দিরটি সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি পবিত্র এবং পবিত্র স্থান। তবে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা এটি দেখতে আসে।

 

চন্দ্রনাথ পাহাড় এর অবস্থান সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে। চন্দ্রনাথ পাহাড় মীরসরাই রেঞ্জ এর একটি পাহাড় আর এই চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। এর পাশাপাশি আরো অনেক মন্দির আছে এই এলাকায়। জনশ্রুতি রয়েছে যে, নেপালের এক রাজা ঘুমের মধ্যে পৃথিবীর পাঁচ স্থানে শিবমন্দির স্থাপনের আদেশ পান। স্বপ্নে আদেশ পেয়ে নেপালের সেই রাজা পৃথিবীর পাঁচ স্থানে পাঁচটি শিবমন্দির স্থাপন করেন। এগুলো হলো- নেপালের পশুপতিনাথ, কাশিতে বিশ্বনাথ, পাকিস্তানে ভূতনাথ, মহেশখালীর আদিনাথ এবং সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির।

 

ইতিহাস অনুযায়ী, প্রাচীন নব্যপ্রস্তর যুগে সীতাকুণ্ডে মানুষের বসবাস শুরু হয় বলে ধারনা করা হয়। এখান থেকে আবিষ্কৃত প্রস্তর যুগের আসামিয় জনগোষ্ঠীর হাতিয়ার গুলো তারই স্বাক্ষর বহন করে। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকান রাজ্যের অধীনে ছিল। এর পরের শতাব্দীতে এই অঞ্চলের শাসনভার চলে যায় পাল সম্রাট ধর্মপাল দ্বারা এর হাতে (৭৭০-৮১০ খ্রীঃ)। সোনারগাঁও এর সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ্ (১৩৩৮-১৩৪৯ খ্রীঃ) ১৩৪০ খ্রীষ্টাব্দে এ অঞ্চল অধিগ্রহন করেন। পরবর্তীতে ১৫৩৮ খ্রীষ্টাব্দে সুর বংশের শের শাহ্ সুরির নিকট বাংলার সুলতানি বংশের শেষ সুলতান সুলতান গীয়াস উদ্দীন মুহাম্মদ শাহ্ পরাজিত হলে হলে এই এলাকা আরাকান রাজ্যের হাতে চলে যায় এবং আরাকানীদের বংশধররা এই অঞ্চল শাসন করতে থাকেন। পরবর্তীতে পর্তুগীজরাও আরাকানীদের শাসনকাজে ভাগ বসায় এবং ১৫৩৮ খ্রী: থেকে ১৬৬৬ খ্রী: পর্যন্ত এই অঞ্চল পর্তুগীজ ও আরাকানী বংশধররা একসাথে শাসন করে। প্রায় ১২৮ বছরের রাজত্ব শেষে ১৯৬৬ খ্রী: মুঘল সেনাপতি বুজরুগ উন্মে খান আরাকানীদের এবং পর্তুগীজদের হটিয়ে এই অঞ্চল দখল করে নেন।

 

সীতাকুন্ড নামের পেছনে উল্লেখ্য ছোট্ট কারণ রয়েছে। হিন্দু পবিত্র গ্রন্থসমূহ অনুসারে সতী দেবীর দক্ষিণ হস্ত পতিত হয়েছিল এখানে। তৎকালীন সময়ে এর নাম দেয়া হয় “সীতার কুন্ড মন্দির” যা পরবর্তীতে সংকীর্ণ হয়ে ‘সীতাকুন্ড’ নামে রূপ পায়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা ১১৫২ ফুট।  পাহাড়ে যাবার পথে ছোট একটি ঝর্ণা দেখাঁ যায় যার পাশ দিয়েই পাহাড়ে উঠার পথ দুই দিকে চলে গেছে। ডান দিকের পথটির পুরোটাতেই পাহাড়ে উঠার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা আর বাম পাশের পথটি সম্পূর্নই পাহাড়ি। সাধারণত পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে উঠা তুলনামুলক সহজ আর সিঁড়ির পথে নামাতে সহজ হয়। চূড়ায় মন্দিরের কাছে ছোট টং দোকান আছে সেগুলিতে হালকা খাবার এবং পূজা দেয়ার উপকরণ পাওয়া যায়। প্রতি বছর মহাশিবরাত্রি উপলক্ষ্যে প্রচুর হিন্দুধর্মালম্বী চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দিরে পুণ্যযাত্রায় আসেন।

 

কিভাব যাবেন?

চট্টগ্রাম থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সা রিজার্ভ নিয়ে সীতাকুণ্ডে আসতে ভাড়া লাগবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর বাসে করে যেতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার, এ কে খান মোড় অথবা কদমতলী যেতে হবে। লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন ৪০-৮০ টাকা ভাড়ায়।

 

কোথায় খাবেন?

সীতাকুণ্ডে সাধারণ মানের হোটেলের মধ্যে সৌদিয়া রেস্টুরেন্ট, আপন রেস্টুরেন্ট এবং আল আমিন উল্লেখ্যযোগ্য। তবে ভাল খাবার পরিবেশনায় এখানে আল আমিনের বেশ সুনাম রয়েছে।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?