হাজারিখিল অভয়ারণ্য | Hazarikhil Wildlife Sanctuary 02/05/2021


PC:


চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার রামগড়-সীতাকুণ্ড বনাঞ্চলে প্রায় ১১৮ হেক্টর পাহাড়ি বনভূমিকে ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা দেয় সরকার। পরবর্তীতে ২০১৪ সাল থেকে বনবিভাগ, সংলগ্ন ২৪ টি গ্রাম এবং স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সহ-ব্যবস্থাপনায় এর নাম দেয়া হয় "হাজারিখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য”।  পাহাড়, প্রাণিকুল, ঝর্না, চিরসবুজ বনানী, গভীর অরণ্য নিয়ে ভালোবাসার চাদরে ঘেরা এই অপরূপ স্থানে ২০১৮ এর জানুয়ারি থেকে কৃত্রিমভাবে পর্যটকদের ভিন্ন স্বাদ নিতে কঠিন এক ট্রেইল বানানো হয়েছে। যেখানে বুনো সৌন্দর্য্য আর রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতা, ভয় আর আনন্দে ভরপুর এই অভয়ারণ্য ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় প্রশান্তি।

 

এখানে প্রায় ২৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি, প্রায় ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৮ প্রজাতির উভচর রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। যেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ বা প্রাণী হিসিবে চিহ্নিত করে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষন করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদের তালিকায় রয়েছে সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, গামারি, ছাতিয়ান, চুন্দুল, গুটগুটিয়া, ইত্যাদি। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু বিরল প্রজাতির বৃক্ষ "বৈলাম" এখানে দেখতে পাওয়া যায়। যার উচ্চতা হয় প্রায় ১০০ মিটার। যা হাজারিখিল ছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও প্রায় নেই বললেই চলে। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর মধ্যে রয়েছে "Himalayan Serow", "Dhole". এদেরকে আমাদের ভাষায় যথাক্রমে বন ছাগল এবং বন কুকুর বলা হয়ে থাকে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে মায়া হরিণ, মুখপোড়ো হনুমান, কাঁকড়াভুক বেজী, উদবিড়াল, মেছোবাঘ, বড় অজগর ইত্যাদি।

 

পাখিদের মধ্যে রয়েছে বিপন্নপ্রায় কাঠময়ূর ও মথুরা। এরা গভীর বনে থাকতে পছন্দ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে কাঠময়ূর জোড়ায় জোড়ায় চলাচল করতে পছন্দ করে। এবং এরা খুব লাজুক প্রকৃতির পাখি। তাই এদের দেখা পাওয়াই ভার। এরা মাটি সরিয়ে কাঠি দিয়ে বাসা বানায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এক গবেষণায় এই অরণ্যে এমন কিছু পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে, যা অন্য কোনো বনে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়না। সেই তালিকায় রয়েছে হুদহুদ, নীলকান্ত, বেঘবৌ, আবাবিল সহ আরো অনেক আকার-আকৃতি, বর্ণ ও স্বভাবের বৈচিত্র্যময় পাখি। মস্তবড় ঠোঁট এবং শিরস্ত্রাণের জন্য বিখ্যাত পাখি ‘কাউ ধনেশ’ও রয়েছে। এটিও বিপন্নপ্রায় পাখিদের মধ্যে একটি। হয়ত দেখা পেওয়া যেতে পারে পানির কাছাকাছি কোনো বড় অন্ধকার গাছে ডালপালার মধ্যে আত্মগোপন করা 'হুতুম পেঁচা'র। এর নাম এমন নামকরণ করেছেন স্থানীয়রা, কারণ এটি হুতুম হুতুম বলে ডাকে। আরো উল্লেখযোগ্য পাখির তালিকায় রয়েছে হট্টিটি, বেশরা, ওয়াক, আলতাপরী, লেজ নাচনি, বাদামি কসাই, সাত ভায়লা, ম্যাকারিন, ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দল এসে এই অরণ্যকে করে তোলে পাখিদের স্বর্গরাজ্য।

 

হাজারিখিল অভয়ারণ্যের শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে ক্যাম্পিং করার পাশাপাশি চা বাগানের বিভিন্ন ট্রি এক্টিভিটিসে অংশ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বন্যপ্রাণীর ট্রি এক্টিভিটিসের এন্ট্রি ফি ১০০ টাকা (জনপ্রতি)। এছাড়া প্রকৃতির মায়াময় রূপ দেখতে চাইলে চা বাগানের অসাধারন হাজারিখিল ট্রেইলে ঢুকে পড়ুন। ঝিরিপথ ও ক্যাসকেডের ভিতর দিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের ৭-৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হাজারিখিল ট্রেইল কালাপানি ঝর্ণায় গিয়ে শেষ হয়।

 

কিভাবে যাবেন?

চট্টগ্রাম থেকে বাসে ফটিকছড়ি এসে সিএনজি নিয়ে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হাজারিখিল অভয়ারণ্যে পৌঁছাতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

হাজারিখিল অভয়ারণ্যে অবস্থিত ভাতঘরে খেতে পারবেন। আবার ইচ্ছে হলে অভয়ারণ্য কাছে অবস্থিত বিবির হাটে গিয়েও খাবার খেতে পারেন। আর সুযোগ থাকলে চট্টগ্রামের জনপ্রিয় মেজবানি ও কালা ভুনা খেয়ে দেখতে পারেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?