ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন একটি দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত এই দ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। চতুর্দিকে নদী আর সাগর বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দ্বীপ ভ্রমণ দারুণ অনুভূতি যোগাবে।
ইউরোপীয়দের লেখা ইতিহাসে জানা যায় যে, সন্দ্বীপে প্রায় তিন হাজার বছরের অধিককাল ধরে লোক বসতি বিদ্যমান। এমনকি এককালে এর সাথে সংযুক্ত থাকা নোয়াখালীতে মানুষের বসতি স্থাপনের পূর্বেই সন্দ্বীপে জনবসতি গড়ে উঠেছিল। সন্দ্বীপ এককালে কম খরচে মজবুত ও সুন্দর জাহাজ নির্মানের জন্য পৃথিবীখ্যাত ছিল। ইউরোপের বিভিন্ন এলাকায় এই জাহাজ রপ্তানি করা হতো। এছাড়াও লবণশিল্প, জাহাজ নির্মাণ কারখানা ও বস্ত্রশিল্প পৃথিবীখ্যাত ছিল।
সন্দ্বীপের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন মতামত শোনা যায়। কারও কারও মতে বারো আউলিয়ারা চট্টগ্রাম যাত্রার সময় এই দ্বীপটি জনমানুষহীন অবস্থায় আবিষ্কার করেন এবং নামকরণ করেন 'শুণ্যদ্বীপ', যা পরবর্তীতে 'সন্দ্বীপে' রুপ নেয়। ইতিহাসবেত্তা বেভারিজের মতে চন্দ্র দেবতা 'সোম' এর নামানুসারে এই এলাকার নাম 'সোম দ্বীপ' হয়েছিল যা পরবর্তীতে 'সন্দ্বীপে' রুপ নেয়। কেউ কেউ আবার দ্বীপের উর্বরতা ও প্রাচুর্যের কারণে দ্বীপটিকে 'স্বর্ণদ্বীপ' আখ্যা প্রদান করেন। উক্ত 'স্বর্ণদ্বীপ' হতে 'সন্দ্বীপ' নামের উৎপত্তি হয়েছে বলেও ধারণা করা হয়। দ্বীপের নামকরণের আরেকটি মত হচ্ছে পাশ্চাত্য ইউরোপীয় জাতিগণ বাংলাদেশে আগমনের সময় দূর থেকে দেখে এই দ্বীপকে বালির স্তুপ বা তাদের ভাষায় 'স্যান্ড-হিপ' নামে অভিহিত করেন এবং তা থেকে বর্তমান 'সন্দ্বীপ' নামের উৎপত্তি হয়।
চারদিকে অবারিত সবুজ মাঠ, গাছপালা, নদী সব মিলিয়ে সন্দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। উপরে সুনীল আকাশ আর নিচে সবুজ বিরান ভূমি মুগ্ধকর এক দৃশ্য। এছাড়া দেখতে পাবেন নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা। উত্তরে দেখতে পারেন তাজমহলের আদলে নির্মিত শত বছরের পুরনো মরিয়ম বিবি সাহেবানী মসজিদ। আছে মসজিদ সংলগ্ন বড় দিঘী, মাজার। দ্বীপের দক্ষিণে আছে ঐতিহ্যবাহী শুকনা দিঘী। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য মসজিদ, স্কুল, মাদ্রাসা, বড় বড় খেলার মাঠ। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখতে পারবেন বাউল জারী সারি গানের আসর। আরও বেড়ানো যায় সন্দ্বীপের উত্তরদিকে আমানুলার চর, উত্তর-পূর্ব দিকে উড়ির চর, কালাপানি, দক্ষিণ দিকে কালিয়ার চর।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কাম্পিংয়ের জন্য সন্দ্বীপ একটি আদর্শ স্থান। ক্যাম্পিং করার সেরা সময় হল শীতকাল, ঘন কুয়াশাময় কয়েকটি রাত পার করে দিতে পারবেন অনায়াসেই। দ্বীপের মানুষজন অত্যন্ত আন্তরিক এবং সহযোগী মনোভাব পূর্ণ। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস আপনি পেয়ে যাবেন সহজেই। নিজেরা বাজার করে খাবার তৈরি করে নিতে পারেন। নদীর মাছ, মাংস থেকে শুরু করে শীতের পিঠা সব কিছুই পাবেন বাজারগুলোতে। আর শীত মৌসুমের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার হল খেজুরের রসের সিন্নি। এছাড়া দ্বীপের বিখ্যাত মিষ্টি খেতে পারেন, সেটার জন্য আপনাকে দ্বীপের দক্ষিণে শিবের হাট পর্যন্ত যেতে হবে।
কিভাবে যাবেন?
শহরের অলংকার বা এ কে খান মোড় থেকে সেইফ-লাইন সার্ভিসে ৩০-৩৫ টাকা ভাড়ায় কুমিরা ঘাটঘর রোড যাওয়া যায়। আবার নিউ মার্কেট থেকে ৭ নাম্বার মেট্রো সার্ভিসে করে ২৭ টাকা ভাড়াতে কুমিরা ঘাটঘর রোড যাওয়া যায়। কুমিরা ঘাটঘর রোড থেকে ১০-২০ টাকা ভাড়ায় টমটম কিংবা রিক্সায় করে কুমিরা-সন্দ্বীপ ফেরীঘাট ব্রীজ পৌঁছানো যায়।
কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার জন্যে স্পিডবোট ও ছোট লঞ্চ আছে। স্পিডবোট ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ টাকা, গুপ্তছড়া ঘাট (সন্দ্বীপ) যেতে সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মত। যদি হোটেলে থাকতে চান তবে সন্দ্বীপ ঘাট (গুপ্তছড়া ঘাট) থেকে সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন টাউন কমপ্লেক্সে। আর ক্যাম্পিং করার জন্যে যেতে পারেন সন্দ্বীপের পশ্চিম পাড়ে (রহমতপুর) নদী ঘেঁষে। সন্দ্বীপ ঘাটে নেমে সিএনজি (ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা) দিয়ে চলে যেতে যেতে পারবেন রহমতপুর।
থাকা খাওয়া?
সন্দ্বীপের মূল শহর এলাকা এনাম-নাহার মোড়ে কিছু হোটেল রয়েছে। যদিও মান খুব বেশি ভালো নয়। সেনেরহাট এলাকায় রয়েছে একটি উন্নত মানের হোটেল। তাছাড়া পূর্ব অনুমতি নিয়ে রাখলে উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে থাকার ব্যবস্থা আছে। আর ক্যাম্প করে থাকার জন্যে সবচেয়ে ভালো হয় সন্দ্বীপের একেবারে পশ্চিম প্রান্ত রহমতপূর চলে যাওয়া।